নরসিংদী প্রতিনিধিঃ
বর্ণাঢ্য আয়োজনে বিভিন্ন কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে ১২ ডিসেম্বর(রবিবার) ‘নরসিংদী হানাদারমুক্ত দিবস’ পালন করা হয়েছে। বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যে ছিল বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুস্পার্ঘ অর্পণ, বেলুন ও কবুতর উড়ানো,বর্ণাঢ্য র্যালী,আলোচনা সভা উল্লেখযোগ্য।
সকাল ১০ টায় জেলা প্রশাসক আবু নইম মোহাম্মদ মারুফ খান জেলা প্রশাসন প্রাঙ্গনে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুস্পার্ঘ অর্পনের মধ্য দিয়ে কর্মসুচির শুভ সূচনা করেন। এরপর বেলুন ও কবুতর উড়ানো মাধ্যমে বিজয় র্যালীর উদ্বোধন করেন।
জেলা প্রশাসক ও মুক্তিযোদ্ধা সেক্টর কমান্ডার ফোরাম,নরসিংদীর সভাপতি আব্দুল মোতালিব পাঠানের নেতৃত্বে সেখান থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধা সমন্বয়ে বর্ণাঢ্য বিজয় র্যালী নিয়ে জেলার প্রধান সড়ক দিয়ে শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনের সামনে গিয়ে শেষ হয়। পরে শিল্পকলা একাডেমী মিলনায়তনে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন শিল্পমন্ত্রী এডভোকেট নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন এমপি।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি তাঁর বক্তব্যের শুরুতে সদর এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলাম হিরু বীর প্রতীক সহ নরসিংদী জেলার খেতাব প্রাপ্ত প্রয়াত সকল মুক্তিযোদ্ধা এবং ৭১এর অন্যান্য সকল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের যারা যে অবস্থানেই থাকেন না কেন তাদের সকলকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কখনো কোন হটকারী সিদ্ধান্ত নেননি। বঙ্গবন্ধু সবসময় নির্বাচনে বিশ্বাসী ছিলেন। তিনি ৭ই মার্চের ভাষণের মাধ্যমে বিশ্ব দরবারে আমাদের ন্যায় সঙ্গত মুক্তিযুদ্ধের বৈধতা দিয়েছিলেন। নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধ আর ১৯৪৮ সাল থেকে শুরু হওয়া স্বাধীনতার সংগ্রামই আজকের বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা হয় -যার মূল নেতৃত্বে ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।তিনি বলেন, আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা আজ গর্বিত যে,তারা বঙ্গবন্ধুর মত একজন দেশ নেতা পেয়েছিলেন এবং তারা বঙ্গবন্ধুর কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে পেয়েও আজ ধন্য। আজকে আামিও মন্ত্রী হিসেবে গর্বিত যে, ১৯৫৬ সালে নির্বাচিত হয়ে বঙ্গবন্ধু শিল্পমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছিলেন। আজকে শিল্পোন্নত দেশে পরিণত হতে আমরা যেভাবে যে স্থানে পৌছেছি শেখ মুজিব সেটা ১৯৫৬ সালেই চিন্তা করেছিল। বাংলাদেশকে কীভাবে গড়তে হবে, তার দিকনির্দেশনা শেখ মুজিবই আমাদের দিয়ে গেছেন।আজকে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা দেশে হত্যার রাজনীতি নয়, আইনের রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করেছি। আমাদের মুক্তিযুদ্ধে নরসিংদী জেলার বিশেষ অবদান রয়েছে।নরসিংদীকে ভিত্তি করেই রাজধানীর ঢাকাকে মুক্ত তথা দেশকে শত্রুমুক্ত করা হয়। আর ভারতের সার্বিক সহযোগিতা আমাদেরকে ঋণি করে রেখেছে।
সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক আবু নইম মোহাম্মদ মারুফ খান। আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(অপরাধ) সাহেব আলী পাঠান,জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি নরসিংদী সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর মোহাম্মদ আলী, নরসিংদীর পৌর মেয়র আমজাদ হোসেন বাচ্চু, নরসিংদী জেলা সেক্টর কমান্ডার প্রধান আব্দুল মোতালিব পাঠান ও অধ্যক্ষ ড. মশিউর রহমান মৃধা। এছাড়া নরসিংদীর ছয়টি উপজেলার উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারগণ যথাক্রমে বীর মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলাম নোয়াব মিয়া, বীর মুক্তিযোদ্ধা মতিউর রহমান তারা, বীর মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমান হাবিব, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাকিম, স্বাধীন বাংলা ফুটবল ফেডারেশনের সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা সুভাষ চন্দ্র সাহা, বীর মুক্তিযোদ্ধা পবিত্র রঞ্চন দাস অনুষ্ঠানে তাদের অনুভূতি ব্যক্ত করে বক্তব্য রাখেন।
মুক্তিযোদ্ধা সেক্টর কমান্ডার ফোরাম,নরসিংদী জেলার সভাপতি আব্দুল মোতালিব পাঠান বলেন, আমাদের প্রতিজ্ঞা ছিল যুদ্ধ করবো, হানাদার মারবো,প্রয়োজনে নিজেরা মরবো। নরসিংদী নেভাল সিরাজের নেতৃত্বে মূল যুদ্ধ শুরু হয়েছিল। এক কোটি শরণার্থী ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল। ভারত সহযোগিতা না করলে নয় মাসে কেন নয় বছরেও আমরা দেশ স্বাধীন করতে পারতাম না। তাদের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। আজকে সাম্প্রদায়িকতার বিষ দাঁত ভেঙ্গে দিতে হবে। তারাই দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে। আমরা স্বাধীনতা বিরোধী চক্রকে কোন আর মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে দিব না।