অসংখ্য কালজয়ী গান দর্শকশ্রোতাদের উপহার দিয়ে উপমহাদেশজুড়ে তিনি পেয়েছেন সবশ্রেণির মানুষের ভালোবাসা ও সম্মান। তিনি এখন তারকাদের তারকা। বাংলাদেশের সংগীত জগতের জীবন্ত কিংবদন্তি রুনা লায়লার ৭০তম জন্মদিন আজ।
১৯৫২ সালের আজকের দিনে সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন রুনা লায়লা। রুনার বয়স যখন আড়াই বছর, তখন তার বাবা রাজশাহী থেকে বদলি হয়ে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের মুলতানে যান। সে সূত্রে তার শৈশব কাটে পাকিস্তানের লাহোরে।
সংগীতশিল্পী মায়ের কাছেই রুনা শিখেছেন সংগীতের প্রাথমিক ব্যাকরণ। এরপর করাচির সংগীতজ্ঞ আব্দুল কাদের পিয়ারাঙ্গ ও হাবীব উদ্দিন খানের কাছে তামিল নেন। মাত্র ছয় বছর বয়সেই গান শুরু করেন। ১১ বছর বয়সে পাকিস্তানের ‘জুগনু’ সিনেমা দিয়ে প্লেব্যাকের খাতায় নাম লেখান তিনি। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
১৯৭৪ সালে ‘এক সে বাড়কার এক’ সিনেমার মধ্য দিয়ে ভারতীয় চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক শুরু তার। একই বছরে স্বাধীন বাংলাদেশে সত্য সাহার সুরে ‘জীবন সাথী’ সিনেমায় প্রথম প্লেব্যাক করেন। এরপর বাংলাদেশের বিভিন্ন সিনেমায় একের পর এক সুপারহিট গান উপহার দিতে থাকেন রুনা।
বাংলা, হিন্দি, উর্দু গানে নিজেকে অন্যরকম এক উচ্চতায় নিয়ে যান রুনা। ‘দামা দাম মাস্ত কালান্দার’ গানটি রুনা লায়লাকে এনে দেয় আন্তর্জাতিক খ্যাতি।
দেশের বাইরে গজল গায়িকা হিসাবে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশে তার সুনাম আছে। মুম্বাইয়ের একটি প্রতিষ্ঠান পাকিস্তানি সংগীত পরিচালক-সুরকার নিসার বাজমিরের প্রতিদিন ১০টি করে তিনদিনে ৩০টি গান রেকর্ড করেন, যা পৃথিবীর একদিনে রেকর্ড করা সবচেয়ে বেশি গানের জন্য নাম ওঠায় গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে। বাংলা-হিন্দি-উর্দু ছাড়াও গুজরাটি, পাঞ্জাবি, স্প্যানিশ, পশতু, ইংরেজিসহ ১৮টি ভাষায় ১০ হাজারেরও বেশি গান প্রাণ পেয়েছে রুনা লায়লার কণ্ঠেই।
দীর্ঘ পাঁচ দশকে অসংখ্য কালজয়ী গান উপহার দিয়েছেন। লোকজ, পপ, রক, গজল, আধুনিক- সব ধাঁচের গানই গেয়েছেন তিনি। চলচ্চিত্রের গানে অনবদ্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে সাতবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। এছাড়া ভারত থেকে পেয়েছেন সায়গল পুরস্কার। পাকিস্তান থেকে অর্জন করেছেন নিগার, ক্রিটিক্স, গ্র্যাজুয়েটস পুরস্কারসহ জাতীয় সংগীত পরিষদ স্বর্ণপদক। বরেণ্য এ শিল্পী তার জাদুময়ী সুরের মায়ায় আরও বহুদিন আমাদের সঙ্গীতকে আলোকিত করে রাখুন- এই প্রত্যাশা নিরন্তর। শুভ জন্মদিন রুনা লায়লা।