কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের আটটি লোহার দানবাক্স এবার ২০বস্তা টাকায় ভর্তি যা গত বারের তুলনায় সর্বোচ্চ রেকর্ড। এইবার ২০বস্তা টাকায় চার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের দানবাক্সে আজ রেকর্ড ৪ কোটি ১৮ লাখ ১৬ হাজার ৭৪৪ টাকা পাওয়া গেলো। সেই সাথে রয়েছে বিভিন্ন দেশের বৈদেশিক মুদ্রা,স্বর্ণ ও রৌপ্য।
দিনভর গননা শেষে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতায় সবগুলো টাকা ব্যাংকে জমা রাখা হয়। জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে সকাল ৯টায় দানবাক্স খোলা হয়। তারপর লোহার বাক্সের টাকা বস্তায় ভরা হয় এবং মসজিদের দ্বিতীয় তলার মেঝেতে শুরু হয় গননা।
আজকে টাকা গননার কাজে রূপালী ব্যাংকের ৫০ জন কর্মকর্তা, মাদ্রাসার ১৫০ জন ছাত্র ও শিক্ষক, কিশোরগঞ্জ জেলার ১০জন বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট,পাগলা মসজিদ কমিটির ২৪ জন সদস্য ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ১০ জন সদস্য সাহায্য করেছে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এ টি এম ফরহাদ চৌধুরী।
২০২২সালের ১লা অক্টোবর মসজিদের দানবাক্সগুলো খোলা হয়। তখন ৩ মাস ১ দিনে ওই দানবাক্স গুলোতে জমা পড়েছিল ১৬ বস্তা টাকা। দিনভর গণনা শেষে ১৬ বস্তায় পাওয়া যায় ৩ কোটি ৮৯ লাখ ৭০ হাজার ৮৮২ টাকা। এ ছাড়া আরও জমা পড়েছিল বৈদেশিক মুদ্রা, স্বর্ণ ও রৌপ্য।
পাগলা মসজিদের আটটি দানবাক্স খোলা হয় তিন মাস পর পর। দেশের অন্যতম আয়কারী ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃত মসজিদটিকে সম্প্রতি পাগলা মসজিদ ইসলামি কমপ্লেক্স নামকরণ করা হয়েছে। পূর্বে মসজিদটি ১০ শতাংশ জমিতে থাকলেও বর্তমানে মসজিদটি ৪ একর জায়গা জুড়ে সম্প্রসারিত।
এ মসজিদের আয় দিয়ে কমপ্লেক্সের বিশাল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া মসজিদের আয় থেকে বিভিন্ন সেবামূলক খাতে অর্থ সহায়তা করা হয়। জেলার প্রত্যেক মসজিদ মাদরাসায় এই টাকার লভ্যাংশ ব্যয় হয় বলে জানিয়েছে পাগলা মসজিদ কর্তৃপক্ষ।
পাগলা মসজিদে বিভিন্ন ধর্মের মানুষকে দান করতে দেখা যায়।বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এখানে মানুষ আসে নিয়ত নিয়ে। মানুষের বদ্ধমূল বিশ্বাস যে কেউ একনিষ্ঠ নিয়তে এই মসজিদে দান করলে তার ইচ্ছা পূরণ হয়।সুউচ্চ মিনার ও তিন গম্বুজবিশিষ্ট তিনতলা বিশাল পাগলা মসজিদ কিশোরগঞ্জের একটি অন্যতম ঐতিহাসিক স্থাপনা।
ইতিহাস বলে, প্রায় ৫শত বছর পূর্বে ঈসা খাঁর আমলে ‘দেওয়ান জিলকদর খান ওরফে জিল কদর পাগলা’ নামে এক ব্যক্তি নদীর তীরে বসে নামাজ পড়তেন। ওই পাগলের মৃত্যুর পর তার সমাধির পাশে পরবর্তীতে এই মসজিদটি গড়ে উঠে। ফলে কালক্রমে মসজিদটি ‘পাগলা মসজিদ’নামে পরিচিত পায়।