নিজস্ব প্রতিবেদক
নিয়োগবিধি সংশোধন করে বেতন বৈষম্য নিরসনের দাবিতে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসাবে তৃতীয় দিনের মতো নরসিংদীতে রবিবার (২৯ নভেম্বর) কর্মবিরতি পালন করে স্বাস্থ্য পরিদর্শক,সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক ও স্বাস্থ্য সহকারীরা। বাংলাদেশ হেলথ এসিস্ট্যান্ট এসোসিয়েশন দাবি আদায় বাস্তবায়ন সমন্বয় পরিষদ অনির্দিষ্ঠকালের এ কর্মবিরতীর ঘোষণা দেন। তাদের কর্মবিরতির ফলে জেলা ১ হাজার ৭০৪টি অস্থায়ী টিকা দান কেন্দ্রে মা ও শিশু টিকা প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কর্মবিরতি চলাকালীন সময় টিকাদান কাজবন্ধ করে জেলার ৬টি উপজেলায় কর্মরত ৩৬০ জন স্বাস্থ্য পরিদর্শক,সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক ও স্বাস্থ্য সহকারীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে সকাল ৮টা থেকে ৩টা পর্যন্ত মনিপতাকা নিয়ে স্ব-স্ব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অবস্থান করে। তাদের দাবিটি হলো “নিয়োগবিধি সংশোধনসহ ক্রমানুসারে স্বাস্থ্য পরিদর্শক,সহকারী স্বাস্থ্য পরির্দশক ও স্বাস্থ্য সহকারীদের বেতন গ্রেড যথাক্রমে ১১, ১২ ও ১৩তম গ্রেডে উন্নীতকরণ”। কর্মবিরতি পালনকালে স্ব স্ব উপজেলায় বক্তব্য রাখেন, রায়পুরা উপজেলার স্বাস্থ্য সহকারী হাজী শরিফুল ইসলাম, কামরু নাহার, সাবিনা আক্তার, শিবপুর উপজেলার শেখ মাসুদুল হক, পলাশ উপজেলার শ্রীবাস চন্দ্রশীল, বোরহান উদ্দিন, মনোহরদীর সর্দার মাসুদ, রুমান রাব্বি, আলতাফ হোসেন,সদর উপজেলার আফজাল হোসান, মনি বেগম, সোহরাব হোসেন, বেলাল হোসেন, বেলাব উপজেলার মিজানুর রহমান মোল্লা, আবু জাফর রনি ও মোশারফ হোসেন প্রমুখ। এ সময় বক্তরা বলেন, আমাদের এ তৃণমূল স্বাস্থ্য সহকারীদের একক ভাবে ঐকান্তিক প্রচেষ্ঠায় দেশে থেকে গুটি বসন্ত নির্মূল, ম্যালিরিয়া রোগ,ধনুর্ষ্টংকার,অন্ধত্ব দূরিকরণসহ সংক্রামক-অসংক্রামক ব্যাধি রোগ নিয়ন্ত্রিত হয়। আমরা শিশুমৃত্যু, মাতৃমৃত্যু হ্রাস, পোলিও নিমূর্ল তথা পোলিও মুক্ত বাংলাদেশ গঠনে বিশ্বব্যাপি সুনাম অর্জন করেছি। আমাদের এ স্বাস্থ্য সহকারীরা ১৯৭৯ সালে ৭ এপ্রিল বাংলাদেশ চালু হওয়া সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচী (ইপিআই) কর্মসূচীর আওতায় দেশের ১ লাখ ২০ হাজার আউটরিচ রুটিন টিকাদান কেন্দ্রের মাধ্যমে ১০টি মারাত্বক সংক্রামিত রোগের টিকা এবং ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সের কিশোরী ও মহিলাদের ৫ ডোজ টিটি টিকা-প্রদান করে আসছি। আমাদের কাজের অর্জনেই আজ বাংলাদেশ টিকাদানে বিশ্বের রোল মডেলে পরিনত হয়েছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গণ থেকে মাননীয় প্রধান মন্ত্রী ৭টি পুরষ্কারও পেয়েছেন। তার পরও সরকারের সকল কর্মচারি থেকে আমরা নানান বৈষম্য শিকার। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যারা গৃহপালিত প্রাণীর চিকিৎসা প্রদান করেন তারা আজ বেতন স্কেলসহ টেকনিক্যাল পদমর্যায় ১১তম গ্রেডে বেতন পাচ্ছেন, সৃষ্টির সেবাজীব মানব শিশু স্বাস্থ্য ও মাতৃ স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করার পরও তৃণমূল স্বাস্থ্য সহকারীদের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হয়নি এখনো। তারা আরও বলেন, আমাদের দাবিটি ন্যায় সংঙ্গত। আমরা ১৯৯৮ সালের ৬ ডিসেম্বর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাদের বেতন বৈষম্য নিরসনের যে ঘোষণা দিয়েছিলেন, ২০১৮ সালে ২ জানুয়ারি তৎকালিন স্বাস্থ্যমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি এবং চলতি বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি আমরা হাম-রুবেলা ক্যাম্পইন বর্জন করলে স্বাস্থ্য মন্ত্রী, সচিব ও মহাপরিচালক মহোদয় আমাদের দাবি সমূহ মেনে নিয়ে যে লিখিত সমঝোতা পত্রে স্বাক্ষর করেন। কিন্তু অদ্যবধি আমরা তার কোন প্রতিফলন পায়নি। আমরা এসব পূর্বঘোষিত প্রতিশ্রুতির দ্রুত বাস্তবায়ন চাই।